ছুঁয়ে দেখা মেঘ ও অন্যান্য গল্প

(ছুঁয়ে দেখা মেঘ ও অন্যান্য গল্প বইটি ২০২১ জলছবি প্রকাশন থেকে প্রকাশিতব্য—২০ টি ছোটগল্প নিয়ে এই গল্পগ্রন্থ। ‘সুতা কাটা ঘুড়ি’ গল্পটি বইটির একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প। বইয়ের বেশ কয়েকটি গল্প বিভিন্ন দৈনিকে  প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের নতুন বইয়ের সঙ্গে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য একুশের বই শিরোনামে ঘুংঘুর-এর এই আয়োজন।) 

সুতা কাটা ঘুড়ি

“তোর ঘুড়ি ভোকাট্টা”।
রবিন একমনে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল। খেয়ালই ছিল না যে সোমা ঘুড়ি কাটার চেষ্টা করছিল। সোমার কথায় পাশ ফিরে সোমাকে দেখলো। 
“কিন্তু এটা তো ফেয়ার না। আমি ঘুড়ি সামলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তাছাড়া আমরা কেবল ঘুড়ি ওড়াতে এসেছি, কাটাকুটি খেলতে নয়। শখ করে একদিন ঘুড়ি ওড়াবো। আর তুই কেটে দিলি?”
“সরি। নে আমারটা ওড়া”।
“না, তুই ওড়া। আমি বাড়ি যাচ্ছি”। বলেই হনহন করে রবিন বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো। রবিনকে যেতে দেখে সোমাও পিছন পিছন হাঁটতে থাকে।
সোমা গ্রামের বড় বাড়ির মেয়ে। অবস্থাপন্ন বাড়ির মেয়ে বলেই এই নামে ডাকে সবাই। রবিন সরদারবাড়ির মেয়ে। রবিন স্থানীয় কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করে। আর সোমা এ বছরই ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছে। দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কটাও বেশ ভালো। রবিন অনেকদিন ধরেই সোমাকে প্রাইভেট পড়ায়। 
“সময়মতো পড়াতে আসিস”। পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে সোমা। রবিন কিছু বলে না। সোজা বাড়ির দিকে যায়। সোমা রবিনের ঘুড়ি কেটে একটু মজা করতে চেয়েছিল। কিন্তু এতে যে রবিন এত রেগে যাবে সোমা তা ভাবতে পারেনি। রবিন চোখের আড়াল হলে সোমাও বাড়ির দিকে হাঁটে। 
সোমাকে প্রাইভেট পড়াতে রবিন ঠিক সময়ই আসে। ঠিক বিকেল পাঁচটা। বহুদিনের চেনা বাড়ি, চেনা পরিবেশ তবু রবিনের ভেতর প্রতিদিন এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করে। কারণটা রবিন নিজেও জানে না। অথচ এই অস্বস্তির কোন কারণই নেই। সোমার মা বসার ঘরে রবিনের সাথে গল্প করছেন। রবিন তেমন কিছু বলছে না। কেবল হু হা। আর মাঝে মধ্যে আপনি ঠিকই বলছেন। সোমার মা বাবাও রবিনকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসে। 
“শরীর ভালো আছে? রবিন”?
“জি চাচী”। এই প্রশ্নটা কমন। প্রতিদিন এক প্রশ্ন, এক উত্তর। এরপর বলবে তোমার কলেজ কেমন চলছে? এর উত্তরে রবিন বলবে, জি ভালো। এসব ছোটখাটো কথাবার্তা চলতে চলতে সোমার বাবা আসেন। তারপর সবাই মিলে চা খান। তারপর প্রাইভেট শুরু করতে হয়। এটাই প্রতিদিনের রুটিন। কথা বলতে বলতেই সোমার বাবা এসে বসলেন। 
“কেমন আছো”? এই প্রশ্নটাও কমন। তাই উত্তরটাও রেডি থাকে।
বুঝলে বাবা তোমার সাথে একটা জরুরি কথা আছে। মানে তোমার পরামর্শ দরকার আর কি।
“কোন বিষয়ে চাচা”?
আমি সোমার জন্য একটা ছেলে দেখেছি।
প্রথমটায় রবিন কিছু বুঝতে পারে না। তাই আবারো প্রশ্নটা করে। কী দেখেছেন বললেন চাচা?
“একটা সম্বন্ধ দেখেছি। খুব ভালো বংশ। ছেলে বড় অফিসার। বুঝলে সোমা সুখেই থাকতে পারবে। বুঝলে রবিন”?
“জি চাচা”।
“মেয়েদের এত পড়ালেখার দরকার কি। ওরা সামনের সপ্তাহে দেখতে আসবে। তুমি কিন্তু অবশ্যই থাকবে। তুমি তো আমার ছেলেরই মতো”।
“জি থাকবো চাচা”। বলেই রবিন সোমার ঘরে ঢোকে। রবিন সোমার দিকে তাকাতে পারে না। সোমা বইয়ের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো আজ এত চুপচাপ”? নীরবতা ভাঙে রবিন। 
“তুই থাকবি তো সামনের সপ্তাহে”?
কেন?
বাবা যে থাকতে বললো।
“ও তোকে দেখতে আসবে তাই”?
“হু”।
“আমি এসে কি করবো”?
“দেখবি না কেমন ছেলের সাথে আমার বিয়ে হবে”?
“আমি দেখে কি করবো। বিয়ে করবি তুই। ছেলে তুই দেখলেই হবে”।
“আজ পড়তে ইচ্ছা করছে না, রবিন”।
“কেন”?, 
“জানি না”। বলেই ফিক করে হেসে ফেললো সোমা। রবিনের কাছে এ হাসি কেমন অচেনা লাগে।
পরদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় দু’জনের আবার কথা জমে ওঠে। 
“তুই আজ এত চুপচাপ কেন রবিন”?
“এমনি”।
“তোর ঘুড়ি কেটে দিয়েছি বলে রাগ করেছিস”?
“না”।
“তাহলে আমাকে দেখতে আসবে বলে মন খারাপ”?


অলোক আচার্য গল্পকার, পাবনা। 

menu
menu