গুচ্ছ কবিতা ।। শরিফুল সোহান 

পাতালের গান

মাথাকাটা যন্ত্রণারা জানুক
আমি তাদের কেউ না—
অন্ধত্বের বাসরে যারা চুমু খেয়েছে
এন্ডিকড়ইয়ের পাতায় যে পথ ঢেকেছে
তারাও জানুক পলাশীর ফুটপাত 
আজিমপুরের ঘাস
রোজ হ্যাভেন্টের সামনে মিটমিট করা
সেই ল্যাম্পপোস্টের কথা।

অন্ধত্বের বাসর নিয়ে বলছি না
কারা হাতের তালুতে পিষেছে
একফালি মরুজদহন—
বলছি না, অনিচ্ছায় পদদলিত ঝালমুড়ির ঠোঙা
অথবা চুইংগামের অবশিষ্টের সাথে
জুতোর আখ্যান

তবুও তো প্রাচীরে গায়ে 
যতটা শ্যাওলার দাগ জমে খসে পড়ে আস্তরণ
ঝিম ধরা পাতালের গান গেয়ে
যে হকার দৌঁড়ে চলে গেল তাকেও বলছি
আমি তাদের কেউ না।

সমুদ্র তুমি কত দূর

বেখেয়ালি অন্ধকারে ঢেকে গেছে চাঁদ
যেখানে সমুদ্র ফণা তুলে আছে
ঘরের প্রকোষ্ঠ ভেদ করে
দক্ষিণের জানালায় যে বাতাস ডেকে যায়
শীতকালে সে যেন নাবিকের কথা বলে।

একঘরে থাকা প্রতিবেশির যতটুকু ঘৃণা
বিপরীতে ততটুকু ভালোবাসা নিয়ে
সমস্ত অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া চাঁদ
দু'দিকে বিচ্ছিন্ন জলরাশি
সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকা নাবিকের মন

সব ফেলে দিয়ে হাঁটো—দেখো
তোমার ভেতরেও একটি সমুদ্র বাস করে।

পসেসিভ

দিন দিন নুয়ে পড়ছি তোমার দিকে
তোমাকেই লাগবে স্লোগান দিচ্ছে
আমার তেমন কোন অস্ত্র নেই অশ্রু ছাড়া
ভালোবাসা ছাড়া নেই—
ভালো কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
তবুও তোমাকে পাওয়ার জন্য বিদ্রোহ করি

মিছিলের ডাক দেই সমাবেশ করি
সমবেত দুঃখের জয়গান
তোমাকে পাওয়ার প্রত্যয় অশ্রু জানে
তুমি শুধু ভালোবাসা জেনো
কেননা তোমার বাড়ির গাছ লতাপাতা
আসবাবপত্রগুলোকে আমার হিংসে হয়।

আলমারি

আমাদের ঘরে আলমারি নেই—
যেখানে দু'চারটে লুকানো চিঠি থাকবে
যেখানে তোমার নাম ঠিকানা
হাতের স্পর্শে গড়ে উঠা 
আঁকাবাঁকা কিছু অক্ষর থাকবে।

আমার একটা সেগুন কাঠের
আলমারি প্রয়োজন—
বেশ শক্তপোক্ত টেকসই যে আলমারি
যেখানে নির্দ্বিধায় রাখা যায় কিছু কথা
কিছু গোলাপের পাপড়ি ও কিছু সুগন্ধি আতর!

আমার একটা আলমারি প্রয়োজন
যেখানে টাকা পয়সা নয়—
আমি একটা মানুষ রাখতে চাই।


শরিফুল সোহান কবি। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন।

menu
menu