সোমেন চন্দের গল্প-উপন্যাসে  রোমান্টিকতার নিগূঢ়তর রূপ

আর একটি মেয়ে—যে মেয়েটির আঘ্রাণ পাইয়া নেহাত আত্মভিমানী কোন মেয়েরও চোখে তাক লাগিবে, তির্যক দৃষ্টিতে একবার অন্তত সেদিক চাহিবে—সেই মেয়েটি, অনেকেই জানে, ব্যারিস্টার প্রতুল চক্রবর্তীর কন্যা। অপরূপ রূপবতী, (নেহাত আত্মভিমানী কোন মেয়েও এ কথা বলিবে)। গায়ের রঙ এত ফর্সা যে ঠোঁটের নকল রঙ-ও সৌন্দর্যে তীব্র হইয়া উঠিয়াছে। মাথার চুল ঈষৎ কোঁকড়ানো, কালো কুচকুচ। মসৃণ, নগ্ন দুই হাতে চুড়ির ভার অল্প, পরনের শাড়ীতে আগুন জ্বলে, লাল।                            —অকল্পিত/ছোটগল্প।

উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাটি শুরু করা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা না খুঁজেই সোমেন চন্দের গল্পে-উপন্যাসের রোমান্টিকতার নিগূঢ়তর রূপ নিয়ে কথা শুরু করতে হলো। উপরে উদ্ধৃতির লাইন কয়টিতে রোমান্টিকতা অনুভব করা আসলে অনেক বেশি রোমান্টিক মানুষ ছাড়া সাধারণমাত্রার রোমান্টিক লোকের বেলা সম্ভব নয় মনে করা কোনো প্রকার দৃষ্টতা হবে কি না জানি না! তবু এমনটিই মনে করে নেয়া হলো, কারণ আমাদের এই ব-দ্বীপের বাস্তবতাই এই যে, যাপিত জীবন কিংবা শিল্প-সহিত্যে রোমান্টিকতা বলতে সাধারণত মানুষজন প্রেম এবং শারীরিক সম্পর্ক তথা যৌনতার বিষয়টাকেই মনে করে! প্রশ্ন আসতে পারে—রোমান্টিকতা তাহলে কাকে বলে? রোমান্টিকবাদীরা রোমান্টিকের যে সংজ্ঞাই দিক না কেন সেসব কঠিন ভাষার সংজ্ঞা এড়িয়ে একদিন আমাদের সাধারণ ভাষায় একটি সংজ্ঞা দাঁড় করিয়ে নিয়েছি এক কথাসাহিত্যিক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডায় বসে! দুজনেই রোমান্টিকতা প্রসঙ্গে ব্যাপক আলাপ আলোচনা করতে করতে একসময় একমত হয়ে এই ছোট্ট একটা সংজ্ঞা তৈরি করে নিয়েছিলাম—প্রকৃতিতে বা শিল্পে-সাহিত্যে তৈরি হওয়া যে চিত্র মানুষের মনে অকৃত্রিম ভালো লাগা এবং আনন্দের জন্ম দেয় তা-ই রোমান্টিক। উপরে উদ্বৃতির গল্পাংশটুকুতে তৈরি চিত্রটিতে কোনো পাঠক কতটা রোমাঞ্চিত হবেন বোঝা কঠিন বটে! তবে খুবই ছোট্ট এই গল্পটিতে শকুন্তলা নামের এক তরুণীর রূপের বর্ণনা দিতে গিয়ে সোমেন চন্দ যে এক নিগূঢ় রোমান্টিকতা প্রকাশ করেছেন সে চিত্রটি পাঠক হিসেবে অনেকেরই মধ্যে একটা ভালো লাগা তৈরি করেছে সেটা কিছুতেই অস্বীকার করার মতো না। অন্যদিকে ‘অকল্পিত’ নামের এই গল্পটিতে সোমেন চন্দ মেকি আভিজাত্যের পাতিবুর্জোয়া সুলভ জীবনচিত্র ফুটিয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তববাদী কিছু মানুষের আচরণ-বৈশিষ্ট্যের চমৎকার চিত্র এঁকেছেন সহজ সরল শব্দে। অবাক করা ব্যাপার হলো গল্পটি পড়ার সময় পাঠকের চোখের ওপর ধরা দিতে থাকে ক্লাসিক কোনো চলচ্চিত্রের মতো হয়ে, সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি বিষয়ও গোচরভূত হয়—মাত্র সাড়ে তিন পাতার এই গল্পটিতে প্রায় ডজনখানি চরিত্রের পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে গল্পকার সোমেন চন্দকে কোনো চরিত্রের ক্ষেত্রেই এক-দুলাইনের বেশি লিখতে হয়নি। ছোটগল্প লেখায় এরকম মুনশিয়ানা ইতিপূর্বে অন্য কোনো কথাসাহিত্যিকের বেলায় দেখা গেছে বলে মনে পড়ে না অথচ কিশোর সোমেন চন্দ সেই বয়সেই এতটা দক্ষতা অর্জন করেছিলেন! সাহিত্যের প্রতি তার টান বুঝে বিপ্লবী সতীশ পাকড়াশী প্রথম পরিচয়েই সোমেনকে বলেছিলেন—‘সাহিত্য রচনার পথেও বিপ্লবের কাজ হয়। তুমি দেশের দারিদ্রপীড়িত দুঃখী জনগণের আশা-উদ্যমহীন জীবনের কথা দিয়ে জীবন্ত গণ-সাহিত্য তৈরী কর—তা হলে তোমার ঈপ্সীত স্বাভাবিক কর্ম্মপথেই ভবিষ্যৎ গণ-বিপ্লবের পথ প্রস্তুতের সহায়ক হতে পারো।’

বুঝিবা তাই সোমেন চন্দের সাহিত্য পাঠ শেষে এবং তার লেখার বিষয়ে যেসকল গবেষক এবং আলোচকদের আলোচনা পাঠের সুযোগ আছে তাতে মনে হয় তার সমালোচকদের সকলেই কেন জানি সোমেন চন্দের ভেতরের রোমান্টিকতাকে তেমন করে দেখতে পাননি কিংবা দেখতে চাননি! তার গল্প নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে দেখেছি সকলেই তার নির্দিষ্ট কয়েকটি গল্প ধরে ধরেই আলোচনায় সীমাবদ্ধ থেকেছেন। যেন অনেকটা এমনই চেষ্টা হয়েছে— যেহেতু সোমেন চন্দ একজন বিপ্লবী রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিলেন এবং বিপ্লবীধারার সাহিত্যিক, তাকে তো কিছুতেই রোমান্টিক পরিচয়ে উপস্থাপন করা যাবে না! সেহেতু সোমেনের রাজনৈতিক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে যে সমস্ত গল্পে (ইঁদুর, বনস্পতি, দাঙ্গা—প্রভৃতি) সেগুলোই বারবার আলেচিত হয়েছে সকল আলোচকদের দ্বারা আর আলোচনার বাইরে থেকে গেছে বাংলা সাহিত্যে আলোচিত হবার মতো তার অনেক সব গল্প। সোমেন চন্দের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ বনস্পতির থেকে একটি গল্পের যে কয়েক লাইন উদ্বৃতি করে এ লেখা শুরু—গল্পাংশটুকু যদি খুব মনোযোগের সঙ্গে কারও দৃষ্টিতে আসে দেখা যাবে কয়েক লাইনের এই গল্পাংশটুকুর মধ্যে কী ভীষণ রকমের কাব্যিক ব্যঞ্জনা! আর এ কথাও সত্য সোমেন চন্দকে ভালো না পড়েও যখন অনেকেই আমরা তাকে একজন কবি হিসেবেই ধরে নিয়ে ফিরি তার স্বনামধন্যতার কারণে, যখন কোথাও কোথাও তাকে নিয়ে কোনো আলোচনার ভেতরে ঢুকতে হয় অযাচিতভাবে। যাই হোক, আমাদের এই যে জানা তাও তো মিথ্যে না— তিনি তো কবিই, তবে তাকে আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে কবি হিসেবে কোন মাপের কবির আসনে রেখে যাব তা প্রমাণের জন্যে তার হারিয়ে যাওয়া সকল কবিতা থেকে বর্তমানে রক্ষা পাওয়া মাত্র তিনটি কবিতা দিয়ে বিবেচনা করতে যাব না! বরং যারা বাংলা কবিতার বোদ্ধা পাঠক তাদেরকে অনুরোধ করব সোমেন চন্দের কোনো কোনো গদ্য রচনা পাঠের দ্বারাই তাকে কবি হিসেবে কোন আসনে রাখবেন তা নির্ধারণ করার জন্য। উপরোল্লেখিত কারণে, বুঝে না-বুঝে নিজেও সোমেন চন্দকে বহু বছর যাবৎ কবি বলেই জেনে এসেছি, আর অনেক পরে যখন বিশ্বজিৎ ঘোষের সম্পাদিত সোমেন চন্দ রচনাবলির বদৌলতে এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সোমেনের প্রায় সব লেখা হাতে এসেছে তখনই কথাসাহিত্যিক সোমেন চন্দ এসে সামনে দাঁড়িয়েছেন আবছায়া থেকে অস্পষ্ট এক আলোতে। এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে চারপাশে তাকে নিয়ে আমাদের ভাবনার আলোকশিখা যত বেশি প্রজ্জ্বলিত হবে সোমেন চন্দ নতুন নতুন রূপে তত বেশি মূর্তমান হবেন আমাদের সামনে। যেমনটা সোমেন গবেষক ড. বীরেন্দ্র মৃধা তার গবেষণা কাজ চালাতে গিয়ে সোমেন চন্দের আরও তিনটি ছোটগল্পের সন্ধান পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন, তিনটি গল্পের নাম যথাক্রমে—‘মুখোস’, ‘পথের শেষে’ ও ‘আমরা তিনজন’, তবে শেষোক্ত গল্পটি অবশ্য বীরেন্দ্র মৃধার গবেষণা সময়ের অনেক আগে থেকেই ১৯৯২ সালে বিশ্বজিৎ ঘোষ সম্পাদিত সোমেন চন্দ রচনাবলিতে আছে! এবার তার উপন্যাস থেকে একটা উদ্বৃতি করছি—

তুমি জানো, তুমি অন্নপূর্ণা, আমাদের পেটপুরে খাওয়াবে; কিন্তু জানো, আজকাল শিবকে ভিখিরি হলে চলে না, লোকে ছি-ছি বলে? হাতে অন্ন তোমার আছে? চুপিচুপি বলি, দেবে ভিক্ষে?                             —বন্যা/উপন্যাস (প্রথম খণ্ড)।

যদিও গবেষকদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি সোমেন চন্দ দুটি উপন্যাস লিখেছিলেন যার মধ্যে একটি উপন্যাসের কোনো রকম হদিসই পাওয়া সম্ভব হয়নি—এমনকি নিখোঁজ সেই উপন্যাসের নামটি পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। তো সে হিসেবে সোমেন চন্দের একমাত্র উপন্যাস বন্যা। যেটির দ্বিতীয় খণ্ড ছাপানোর আগেই হারিয়ে গেছে তাও আমরা জানি! উপরে উদ্ধৃতির দেড় লাইন বন্যা উপন্যাসের প্রথম খণ্ডের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পরই পেয়ে গেলাম, ভীষণ দুর্যোগকালের জীবনযুদ্ধে এক সাহসী যোদ্ধা প্রিয়নাথ খাদ্যের অভাবের সময়ও কাব্যের স্বরে স্ত্রী লীলাবতীকে এভাবেই বলছেন খাদ্যের আয়োজনের প্রসঙ্গে। কে বলছেন—প্রিয়নাথ? নাকি কবি সোমেন চন্দ? হুম, এমন সব ক্ষেত্রে আমরা মনেই করি বা অলিখিত নিয়মে জানি—কবিতায়, গল্পে-উপন্যাসে কবি বা লেখক তার সৃষ্ট চরিত্রের মুখে যা বলিয়ে নেয় অনেক সময় সে তো তারই কথা, অন্য কাউকে দিয়ে অন্য আরেক ঢঙে বলিয়ে নেয়ার এক রোমান্টিকতা! আরেকটি গল্পের থেকে উদ্ধৃতি করার ইচ্ছে বাদ দিয়ে আগে আমরা রোমান্টিকতা সম্বন্ধে একজন বিখ্যাত মনিষার নিজের লেখা থেকে জেনে নিই বিপ্লবী চেতনায় রোমান্টিকতার ভূমিকা নিয়ে, তিনি সতীশ পাকড়াশী—বলেছেন, ‘কলকাতায় নবযুগের অগ্নিময়ী বাণী নিয়ে এলো “যুগান্তর” পত্রিকা। আমাদের স্কুলেও ছাত্র-নেতারা সপ্তাহে সপ্তাহে যুগান্তর বিক্রি করতো লোকের মনে কর্ম্মোদ্দীপনা জোগানোর জন্য। আমি মনোযোগ দিয়ে প্রত্যেক সংখ্যাটি পড়ে ফাইল করে রাখতাম। ওইগুলিতে লেখা হত মহাভারতের যুদ্ধে অর্জ্জুনের প্রতি শ্রী কৃষ্ণের ন্যায় যুদ্ধ করার উপদেশ, কর্ম্মযোগের কথা, চণ্ডীর সুর-অসুরের কথা, শিশু-রাজপুত ও মহারাষ্ট্রীয়দের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা এবং মাৎসিনি ও গ্যারিবন্ডির জীবন কথা। গৌরবমণ্ডিত ভারতের বর্ত্তমান দাসত্বের সঙ্গে উক্ত বিষয় সমূহের এমন উত্তেজনাপূর্ণ ভাষায় তুলনা হত যে, আমাদের সকল চিত্ত-মন মথিত হয়ে উঠত সংগ্রামের উদ্দীপনায় রোমান্টিক কল্পনার আবেগে।’ এবার রোমান্টিক বিপ্লবী কথাসাহিত্যিক সোমেন চন্দের আরেকটি ছোটগল্প থেকে উদ্ধৃতি করছি—


বারটায় ছাড়বে কলকাতার গাড়ি, এখন আটটা বেজে গেছে। আমার স্বভাবটা তো জানো, আপন ভোলা নই, কিন্তু নিজেকে ভুলতে পারি ইচ্ছে করলে। তুমি চলে যাও, এতটুকু জোর আমি করবো না;— থাকো, তোমাকে ভালবাসবো—          

                                                                                                       —ভাল-না-লাগার শেষ/ছোটগল্প।

গল্পের নায়ক অদিতি গুপ্ত বলছে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর হঠাৎ একদিন হুট করে তার হোস্টেলে চলে আসা স্ত্রী রমলা গুপ্তকে (এখানে বিচ্ছেদ মানে সত্যি সত্যিই বিচ্ছেদ বোঝানো হয়েছে), স্ত্রীকে নিবিড় করে কাছে পাওয়ার পরও রাত শেষে দিনের দ্বিতীয় লগ্নে রমলার অযাচিত বিদায়ের কথা ভেবেই এমন বলা। যদিও গল্পটা শেষতক মিলনাত্মকই হয়ে উঠেছিল, যে সোমেন চন্দ রোমান্টিক এ গল্পটির লেখক তার এ রূপ-রোমান্টিকতার বিষয়টি সমালোচকগণ খুব বেশি করেছেন বা আদৌ করেছেন বলে জানা নেই। কেবলই তাকে রাজনৈতিক পরিচয়ে অর্থাৎ বিপ্লবী চেতনার পরিচয়ে পরিচিত করানোটাই যেন বিশেষ প্রচেষ্টা ছিল সবার। এটা এ অঞ্চলের রাজনৈকিতদের একটা দৈন্য ধারণার কারণেই—তারা ধরেই নিয়েছেন কোনো বিপ্লবী কখনো রোমান্টিক হতে পারে না! বিপরীতে এ লেখার লেখক ছোটকাগজ মননরেখায় এ দেশের উর্দু ভাষার কবি নওশাদ নূরী সংখ্যায় নওশাদ নূরীর কবিতার আলোচনা করতে গিয়ে ‘নওশাদ নূরী : বিপ্লব আকাঙ্ক্ষার কবি’ শিরোনামে লেখায় বলেছে ‘রোমান্টিকতায় আক্রান্ত হওয়া ছাড়া কারও পক্ষে বিপ্লবাকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত হওয়া সম্ভব নয়। সমাজের পুরনো সব প্রথা-প্রচল ভেঙে সমস্ত মানুষের মুক্তির ভাবনা রোমান্টিকতা ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়, তবে কথা হলো এমন রোমান্টিকতা কেবলই মায়াবী নয় বরং তার গভীরে থাকে মানুষের জন্য কল্যাণকর এক নির্মাণ। তখনই সেই রোমান্টিক মানুষটি খুব সহজে পারে শ্রেণিসংগ্রামে আত্মহুতি দিতে।’ সোমেন চন্দকে ভালো করে পড়তে গিয়ে এ লেখকের সে ধারণা আরও অধিক গাঢ়তা পেয়েছে। সোমেন চন্দের একটি গল্পের নাম ‘গান’। একদমে পড়ে ফেলার মতো গল্প এটি। যুবক অশোক আর তার নবপরিণীতা শীলাবতীর প্রেমমগ্নতা ও খুনসুটিতেই গল্প শেষ—ড. সফিউদ্দিন আহমেদের ভাষায় যাকে বলা হয়েছে শারীরিক ঘ্রাণ! তিনি তার সোমেন চন্দ : মার্কসবাদী বিল্পবী ও সাহিত্যিক গ্রন্থে সোমেন চন্দের গল্পের বিষয়ে লিখতে গিয়ে ‘সোমেন চন্দের গল্পে শারীরিক ঘ্রাণ’ শিরোনামে ছয় পৃষ্ঠার একটি লেখা এবং ‘সোমেন চন্দের গল্পে নিসর্গ’ শিরোনামে সাড়ে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি লেখা লিখেছেন আমাদের জন্য। ছোট ছোট প্যারার দ্বারা শুরু করা প্রথম লেখাটির শুরুতেই সোমেন চন্দের ফ্রয়েড পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তৃতীয় প্যারাতে ড. সফিউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন—‘মানুষের যৌন অনুভূতি হলো কবিতার মতো, মহৎ শিল্পকর্মের মতো রহস্যময়’। তিনি এ কথা বললেও সোমেন চন্দের লেখার ভেতরের রোমান্টিকতার কোনোই উল্লেখ না করে বলেছেন সোমেন চন্দের গল্পে শারীরিক ঘ্রাণের কথা। আর এহেন ঘ্রাণের প্রমাণ দিতে গিয়ে তিনি উদ্ধৃতি করেছেন সোমেন চন্দের ‘রাত্রিশেষ’ ‘অন্ধ শ্রীবিলাসের অনেক দিনের একদিন,’ ‘বনস্পতি’, ‘পথবর্তী’ গল্পের থেকে। সঙ্গে এও বলেছেন—সোমেনের সৃষ্ট সংলাপ ফুলেল, সেগুলোর অনুভূতির ঘ্রাণকে বিশ্লেষণ করে শারীরিক ঘ্রাণের ইঙ্গিতময়তাই বোঝা যাবে। উলটো দিকে সাধারণ পাঠক হিসেবে এ লেখার লেখক সোমেন চন্দের গল্পের সংলাপের ভেতর অনুভব করেছে যতটা না শারীরিক ঘ্রাণ বরং বেশি অনুভব করেছেন প্রেমময় নিগূঢ় রোমান্টিকতা! ব্যক্তি ব্যবধায় অনুভব-অনুভূতির পার্থক্য হবে এটাই স্বাভাবিক বলে আমরা জানি। আরেকটি উদ্ধৃতি— 

ইস আমি পারিনে। এখানে কি কেউ এমন নেই যে আমাকে এই nonsense talk থেকে রেহাই দিতে পারে। রেখা অভিনয় ভঙ্গিতে বলল।
ভারতী নীরবে হাসল, ভারতীকে জড়িয়ে রেখা বললো তোর মত রূপও যদি আমার থাকতো তবে দেখতিস।
কথবার্তায় রেখার প্রকৃতিই ওই রকম। সব সময় কেবল সৌন্দর্যচর্চা। একটু পরে বলল, থিয়েটার কেমন হলো?
দু’চার বছরেও এমন হয়নি।
খানিক পরে : অঞ্জন আসবে লিখেছে।
ভারতী বলল, শুধু এই? আর কি লিখেছে বল?
লিখেছে : পাইনের মর্মর ভুলতে পারো কি? আমাকে তো অনেকগুলো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়, তাদের ভাষায় আমি এক অপরিচিত ভাষাই শুনতে পাই। আমার ভালো লাগে, কিন্তু সেই মুহূর্তটিকে কি নামকরণ করব বল, যখন মনে হয়, যা অতীতে তা তো আর আলোক নয়, শুধু অন্ধকার।                        —অমিল/ছোটগল্প।

এক থিয়েটার দলের দুই সহকর্মী ভারতী আর রেখা, তারা বান্ধবী নয়— দেখা হলে হাই-হ্যালো হয় এই যা। তারা চিন্তা-ভাবনায় এবং আচার-আচরণে দুজন দুই মেরুর অথচ সোমেন চন্দ তাদের মুখেও এমনতর রোমান্টিক সংলাপ বসিয়েছেন। পাঠক চাইলেই সোমেন চন্দের সাহিত্যে এরকম ঢের রোমান্টিক দৃশ্য খুঁজে পাওয়া খুব একটা দুষ্কর হবে না! সোমেন চন্দের একটি গল্পের নাম ‘গান’। জারি-সারি, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি, পল্লিগীতি আর ঘেটুগানে আমাদের গানের ভাণ্ডারের ঐতিহ্য যে বিশাল তা বাঙালি বলতেই জানা বিষয়, তবে আকারে খুব ছোট সোমেন চন্দের ‘গান’ গল্পটি আসলে কোনো গানকে মুখ্য করে লেখা নয়। গল্পটি আদতে এক তরুণী বধূ সুন্দরী শীলাবতী আর তার স্বামী অশোক ওরফে ভূতুর প্রণয় সম্পর্কিত! অশোক বেচারা রাত পোহালেই চাকরির সূত্রে প্রবাসে চলে যাবে আর সে রাতেই কিনা তার মা বাড়িতে ভাসান গানের আসর বসালেন। আর তার স্ত্রী শীলাবতী যখন গানের আসরে বসা, সেখান থেকে স্ত্রীকে ফেরাবার যেরকমের চেষ্টা তা সত্যিই খুব মজার দৃশ্য, শেষতক অশোকের স্ত্রী শীলাবতী গানের আসর ছেড়ে চলে আসলে ঘরে যে রোমান্টিকতা সেটা না হয় উদ্ধৃতিতেই দেখানো যাক—

কেমন সুন্দর হচ্ছিলো, তা-ও একটু দেখার জো নেই। ও মাগো আলোটা কী রকম জ্বলছে। আগুন লাগাবে নাকি? জেগে থেকেও এটা চোখে পড়ছে না?—বাতিটা কমাইয়া দিয়া শীলাবতী বলিল, নিজের ঘুম পেয়েছে, সোজা শুয়ে পড়লেই হয়, সঙ্গে সঙ্গে অন্য কারুরও ভয়ানক ঘুম পাবে এমন কোনো কথা আছে? কী ভাল লাগছিল, তবু দেখতে পারলাম না।
মেয়েদের তো ওই দোষ, ভাল রুচি কাকে বলে তা জানে না। অশোক বলিল।
থাক, থাক বক্তৃতার আর দরকার নেই।
শীলাবতী কি হাসি চাপিতেছে।
আমি বুঝি সেইদিক থেকেই বলেছি? আমি বলেছি এক মহত্তর—
থাক থাক আর বলতে হবে না। শীলাবতী বিছানার কাছে আসিল। আস্তে আস্তে পাশ ফিরিয়া অশোক কিছু বলিতে গিয়া শীলাবতীকে দেখিতে পাইয়া চোখ বুঝিল। বিড় বিড় করিয়া বলিতে লাগিল, যাও না, প্রাণ ভরে দ্যাখোগে, সারারাত জেগে দ্যাখো, আমি তো অমন বাজে শখে সারারাত জেগে তারপর ভোরবেলা ট্রেনে চড়ে ঘুমে ঢুলতে পারিনে।
হাসিয়া শীলাবতী বলিল, নাঃ এ ঘুম আর কিছুতেই ভাঙবে না দেখছি।
অশোক তাহার বুকে এক মৃদু উষ্ণতা অনুভব করিল। চোখ মেলিলে কথা বলিতে হয়, বোধ করি সেই ভয়েই সে চোখ 
বুজিয়া পড়িয়া রহিল।                                    —গান/ছোটগল্প।

‘যে স্বপ্ন দেখে না এবং অন্যকে স্বপ্ন দেখাতে পারে না সে কখনো বিপ্লবী হতে পারে না’—বলেছেন চারু মজুমদার। তবে কথা হলো স্বপ্ন তো শুধুই ঘুমের ভেতর দেখার বিষয় নয়, প্রখর জাগরণের মধ্যেও স্বপ্নকে দেখতে হয় নিগূঢ় রোমান্টিকতায় তাড়িত হয়ে। আর এহেন রোমান্টিকতা কেবল বিপ্লবী চেতনার মানুষের দ্বারাই সম্ভব! বিপরীতে প্রলেতাড়িয়েত মানুষজনও স্বপ্ন দেখে এবং স্বপ্নের বিষয়ে বিবিধ কুসংস্কারের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরে থাকে যা বিপ্লবের পথে একপ্রকার বাধাও বটে। বিপ্লবী চেতনার কবি ও কথাসাহিত্যিক সোমেন চন্দ স্বপ্নের বিষয়ে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারকে টার্গেট করেও গল্প লিখেছেন এবং ‘স্বপ্ন’ শিরোনামের গল্পটিতে সোমেন চন্দ অসাধারণ রকমের এক রোমান্টিক চিত্রও এঁকেছেন যা একটু নিবিড় করে ভাবলে তার রোমান্টিকতার ধরনকে পাঠক-সমালোচক নতুন মাত্রিকতায় দেখতে পাবেন। কিছু সময় পরেই যে মানুষটি মারা যাচ্ছে তাকে কেন্দ্র করে এমন দুর্মদ রোমান্টিকতার চিত্র আঁকা অনেক বড় মাপের রোমান্টিক শিল্পী-সাহিত্যিক না হলে সম্ভব না! উদ্ধৃতি করছি ‘স্বপ্ন’ গল্পের আলোচিত চিত্রটি—

তখন অনেক রাত্রি। চারিদিক নিস্তব্ধ।
আড় হইয়া শুইয়া হাসিতে হসিতে মালা বলিল, ভারি বাবু হয়ে গেলে যে গো।
নাকে-মুখে ধোঁয়া ছাড়িয়া শঙ্কর বলিল, ওটা আমার অনেক দিনের অভ্যাস, তোর জন্যই তো বাবু হই মালা।
আমার জন্যে? অন্যমনস্কভাবে এই কথা বলিয়া মালা ধোঁয়ার কুণ্ডলীর দিকে চাহিয়া রহিল। তারপর হঠাৎ এক কাণ্ড।
শঙ্কর বলিল, খাবি?
কী? মালা আশ্চর্য।
জ্বলন্ত সিগারেটটি তাহার মুখের কাছে বাড়াইয়া শঙ্কর বলিল, খা।
মালা এবার না হাসিয়া আর পারে না। খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। হাসিতে হাসিতে বলিল, আমিও তাহলে বাবু হয়ে যাবো নাকি গো?
বাবু নয়, বিবি।
বিবি? প্রথম আস্তে তারপর খুব জোরে একটা টান দিয়া মালা সিগারেট ছুড়িয়া ফেলিয়া দিল, কাশিতে কাশিতে বালিশে মুখ গুঁজিল। 
শঙ্কর হাসিয়া উঠিল। হাসি থামিলে ডাকিল, মালা।
কেন গো?
তাহার মুখের উপর আরও ঝুঁকিয়া পড়িল শঙ্কর, ডাকিল—মালা?                        —স্বপ্ন/ছোটগল্প।

সোমেন চন্দের গল্পে মানুষের সম্পর্কে বহুধা রূপে রোমান্টিকতা এসেছে। ‘প্রান্তর’ গল্পে যাদের নিয়ে রোমান্টিক চিত্র এঁকেছেন কথাসাহিত্যিক সোমেন চন্দ—সম্পর্কে তারা নাতবউ এবং দাদি-শাশুড়ি, দুজনের মধ্যে বয়সের দূরত্বকে অতিক্রম করেই তারা যে কতটা রোমান্টিক সেটা উদ্ধৃতির দ্বারাই দেখানো হলো—

সতী আস্তে লাবণ্য লতার পেছনে গিয়া দাঁড়াইল, ডাকিল—ঠাকুরমা?
তিনি ফিরিয়া চাহিলেন, তাহাকে দেখিয়া হাসিয়া ফেলিলেন। এইমাত্র স্নান করিয়া আসিয়াছে সতী। ভ্রুজোড়া, চোখের পল্লব আর চোক্ষে এখনও জল লাগিয়া রহিয়াছে। ভিজা চুলগুলি খোলা, মাথায় ঘোমটা নাই। সিঁথি আর কপালে সিঁদুর।
আমি যদি পুরুষ হতাম, তাহলে তোকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতাম না, বৌ।
সতী হাসিয়া উঠিল, হাসিতে হাসিতে লাবণ্য লতার গায়ে ঢলিয়া পড়িল, তিনি চ্যাঁচাইয়া উঠিলেন, উঃ মাগো। বৌ, তোর মত আর একটিও দেখিনি। তোর মত দস্যি নাকি আমি। ব্যথা পাইনে?
                    —প্রান্তর/ছোটগল্প।

১৯৯২ সালে প্রথম প্রকাশিত বিশ্বজিৎ ঘোষ সম্পাদিত সোমেন চন্দ রচনাবলিতে আমরা পাই ২৬টি গল্প, এর অনেক পর ২০১৩ সালে প্রকাশিত ড. বীরেন্দ্র মৃধার গবেষণাপত্র প্রকাশের পর নতুন করে আরও ২টি গল্পের সন্ধান জানতে পাই ‘মুখোস’ ও ‘পথের শেষে’। ‘মুখোস’ গল্পটি একটি রোমান্টিক গল্প হলেও ‘পথের শেষে’ গল্পটিকে বলা চলে পুরোই একটি রাজনৈতিক গল্প। রোমান্টিক গল্প ‘মুখোস’ থেকে উদ্ধৃতি করার লোভ সামলানো গেল না—

‘দীপক তার নরম একটি হাত ধরে আবার বললে, তুমি জানো একটি দিনের কথা আমার খুব মনে পড়ে। সেদিন তুমি কি কারণে যেন ভয়ানক চমকে উঠেছিলে আমি আজও তেমন চেহারা দেখিনি। ভারতী আজও ঠিক আগের মতো আমাকে ভালোবাসো তো? ভারতী লাল হয়ে উঠলো, কিছুই বলতে পারলো না।
দীপক স্নিগ্ধ স্বরে বললে, তোমার এ রকম কষ্ট দেখে আমার হচ্ছে। আমি তোমাকে এই উচ্ছবৃত্তি থেকে রেহাই দিতে চাই।
—উচ্ছবৃত্তি, ভারতী হাত ছাড়িয়ে নিলো, হঠাৎ উষ্ণ হয়ে বললে, আপনার কি করে এমন ধারণা হলো বলুন তো? একে উচ্ছবৃত্তি বলে?
—তা নয় তো কি? তোমাকে ভালোবাসি, এই দাবিতে অন্ততঃ এসবকে আমি তাই বলতে পারি। অত অর্থের আমার দরকার নেই, তোমারই প্রয়োজনে আমার প্রয়োজন অনুভব করছি। সত্যি আজ আমার ভয়ানক ভালো লাগছে। এখন ভাবছি এতদিন কেন দেখা হয়নি, তুমি লুকিয়ে ছিলে কোথায়, এত কষ্ট তোমার!
বার বার একই কথার পুনরাবৃত্তিতে ভারতী ভয়ানক বিরক্ত হলো, বললে, দোহাই আপনার, চুপ করুন দীপকবাবু!
—এখনও সেই আপনি! তুমি কি একদিনের জন্যেও আমাকে ভালোবাসোনি? 
—বেসেছিলাম কিন্তু সেটা একটা দুঃস্বপ্ন। তার ফলটুকু আমার মনে আছে, চিরকাল মনে থাকবে।
                —মুখোস/ছোটগল্প।

খুঁজলে সোমেন চন্দের সাহিত্য থেকে রোমান্টিকতার এরূপ চিত্র আরও অনেক অনেক উদ্ধৃতি করা যাবে, তবু লেখাটির সমাপ্তি টানার জন্যে সর্বশেষ এ কথা বলা—আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি শুধুই যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হবেন আর রাজনৈতিক ব্যক্তিই শুধু রাজনীতি নিয়েই ভাববেন এমনটা ভাবনার কোনোই কারণ নেই! আমাদের দুর্ভাগ্য যে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সর্বদাই সংস্কৃতিচর্চার কর্মীদের রাজনীতি না করা লোক বলেই মনে করেছেন! একজন রাজনৈতিক নেতা সংস্কৃতিচর্চা নাও করতে পারেন, কারণ রাজনৈতিক কাজটি আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি যে রাজনৈতিক কাজ করে না—এমনটা ভাবনার কোনোই অবকাশ নেই! শিল্প-সাহিত্যের বিশ্ব ইতিহাসে এমন অনেক অনেক নাম আছে যারা সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হয়েও বিপ্লবী রাজনীতির জন্য রণাঙ্গনে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন—র‌্যালফ ফক্স, ক্রিস্টোফার কর্ডওয়েল, জন কনফোর্ট এবং গ্রাৎসিয়া লোরকার মতো কবি সাহিত্যিকগণ তার প্রমাণ। আমাদের এই ভূখণ্ডেও বিপ্লবী ধারার রাজনীতি যদি এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারতেন আমাদের রাজনৈতিকগণ তখন হয়তো সোমেন চন্দের মতো, সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো অসংখ্য সাহিত্যিক-শিল্পী তৈরি হয়ে উঠত যারা জানত সংস্কৃতি মানে শুধু ভোগ-বিলাসের রোমান্টিকতা নয় তার বিপরীতে আরেক প্রকার রোমান্টিক চিন্তার মানুষও আছে যারা মানুষের শোষণমুক্তির জন্য প্রাণ বিসর্জন দেবার কথাও ভাবেন।

গ্রন্থ সহায়ক
১.    সোমেন চন্দ : মার্কসবাদী বিপ্লবী ও সাহিত্যিক, ড. সফিউদ্দিন আহমেদ। 
২.    অগ্নিদিনের কথা সতীশ পাকড়াশী সম্পাদনা, অর্জুন গোস্বামী।
৩.    সোমেন চন্দ রচনাবলি, সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ।   
৪.    সোমেন চন্দ ও প্রগতি সাহিত্য আন্দোলন, বীরেন্দ্র মৃধা।
৫.    র‌্যাফল ফক্স রাজনীতি, সংস্কৃতি, ভারতনীতি, রবিন পাল।


রইস মুকুল কবি প্রাবন্ধিক এবং সম্পাদক। সম্পাদিত ছোট কাগজ : ঠিকানা। প্রকাশিত বই : ঘুমের জাগরণে কালো মাছ, পাথরের ভাঁজে ভাঁজে মায়ামৌরুসি, যেসব পইখ আত্মঘাতী হয়, অদৃশ্য ইঁদুর এবং ধর্ম্মপালের পদাতিক সেনা। তিনি নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন।

menu
menu