সাহিত্যে মাতৃপ্রতিমা

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন রোমান্টিক, তাই সৌন্দর্য বিষয়ে ভেবেছিলেন বেশ। সৌন্দর্য তাঁর একান্ত নিজস্ব ভাবনার প্রকাশ, অন্যের সঙ্গে তা ঠিক মেলে না। ‘ঊর্বশী’ কবিতার প্রথম চরণে কবি বলছেন, “নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ  বধূ, সুন্দরী রূপসী/  হে নন্দনবাসিনী ঊর্বশী!” — নন্দনের যে উর্বশী এ কবিতার প্রথম চরণে উল্লিখিত সে মা নয়, কন্যা নয়, বধূও নয়। তাহলে সে কে? সে আসলে নারীর রূপে প্রকাশিত রবীন্দ্র সৌন্দর্যভাবনা। তবে রূপকটা নারীর। রবীন্দ্রনাথ এই এক নারীকে  তিন রূপে দেখতে পাচ্ছেন। এদের মধ্যে আমরা লক্ষ করছি, মাতৃরূপটা সবার আগে এসেছে।  এ রূপটা নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রূপ রবীন্দ্রনাথের কাছে। তাই আমরা দেখতে পাই, ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীকে যখন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, “তুমি কেন বিয়ে করতে আ্গ্রহী নও?” সে স্পষ্ট জবাব দেয়: “ মাতৃ- আজ্ঞা”। এ মা আসলে আর কেউ নয়, দেশ। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করি, মাতৃহারা কল্যাণী বড় হয়েছে চিকিৎসক পিতার স্নেহ আর মমতায়। কিন্তু সে দেশের তুলনা করছে মায়ের সঙ্গে পিতার সঙ্গে নয়। আসলে কল্যাণীর ভেতরে একজন রবীন্দ্রনাথ বাস করছেন, যিনি দেশকে মা হিসেবে ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতেও তাই দেশ মায়ের রূপকেই ফিরে আসে বার বার। নজরুলের মা আবার এমন প্রকৃতি আর কোমল কমনীয়তা নিয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয় না। তাঁর মাতৃ-ইমেজ অনেকটা ‘রক্তাম্বরধারিনী’। কিন্তু দেশকে মায়ের সঙ্গে মিলিয়ে পাঠ করতে তিনিও রবীন্দ্রনাথের মতো করেই ভাবছেন। ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতার বিখ্যাত সে দুচরণে আমরা দেশকে মা হিসেবেই উল্লেখ পাই: “ ‘হিন্দু না মুসলিম?’ ওই জিজ্ঞাসে কোনজন?/ কাণ্ডারী বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।” এখানে মা আসলে দেশই। সে দেশ কোনটি? আমরা দেখবো ‘জননী মোর জন্মভূমি’ শীর্ষক গানে নজরুল বলছেন, ‘জননী মোর জন্মভূমি, তোমার পায়ে নোয়াই মাথা।/ স্বর্গাদপি গরিয়সী স্বদেশ আমার ভারত মাতা।” আসলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল, দুজনেরই এ-মা হলো স্বদেশ, যা আসলে ঔপনিবেশিক ভারত তথা বাংলা, যার পরাধীনতার কথা ভাবতে গিয়েই তাঁরা কবিতায় বা গল্পে এভাবে দেশকে মাতৃরূপে তুলে ধরেছেন। 

দুই.

রবীন্দ্রনাথের যে বছর জন্ম ১৮৬১ সাল, সে বছরই বাখোফেনের ‘মাতৃ-অধিকার’বইটা প্রকাশিত হয়। বাখোফেন সে বইতে বলতে চেয়েছেন, প্রাচীন গ্রীকদের মধ্যে মাতৃ-অধিকার থেকে পিতৃ-অধিকারে মানব-সমাজের বিবর্তন ঘটেছে ধর্মীয় ধারণাগুলোর বিবর্তনের ফলে। বাখোফেন এসকাইলাসের ‘অরেস্টেইয়া’ নাটকের উল্লেখ করে বলেন, এ নাটক বীরযুগের ক্ষয়িষ্ণু মাতৃ-অধিকার এবং উদীয়মান বিজয়ী পিতৃ-অধিকারের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তারই নাট্যরূপ। ক্লাইটেমনেস্ত্রা তার প্রেমিক এজিস্থাসের জন্য ট্রয় যুদ্ধ ফেরত স্বামী আগামেমননকে হত্যা করে। কিন্তু আগামমেননের ঔরসে ক্লাইটেমনেস্ত্রার গর্ভে জন্ম নেওয়া অরেস্টেস মাকে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়। প্রাক্তন স্বামী  রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত নয়, কিন্তু মা সন্তানের সঙ্গে রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত। সুতরাং ক্লাইটেমনেস্ত্রার পক্ষে যুক্তি ছিলো সে রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত নয় এমন একজনকে হত্যা করেছে, কিন্তু মাতৃ-অধিকার অনুযায়ী অরেস্টেস এমন একজনকে হত্যা করেছে যে তার মা। মাতৃ-হত্যার মতো অপরাধের কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই। সে বিচার সভায় সমভাগে বিভক্ত দৈব-মণ্ডলির সভানেত্রী এথেনা অরেস্টেসের পক্ষে সিদ্ধান্তমূলক ভোট দিয়ে পিতৃ-অধিকারকে নিশ্চিত করে। এঙ্গেলস বাখোফেনের এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করেন। 

এরপর থেকে প্রাচীন গ্রীক-সাহিত্যে ঘুরে ফিরে মা এক বিষণ্ন বেদনার প্রতিরূপ। এসকাইলাসের পরে সফোক্লিসের ‘ইডিপাসে’ আমরা জোকাস্টাকে দেখি এমনি বেদনা আর অনাকাঙ্ক্ষিত মাতৃত্বের ভারে আত্মহত্যা করতে। সে মৃত্যু ভয়াবহ ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে আছে বিশ্বসাহিত্যে। দৈব-প্রেরণা থেকে বাঁচতে সে আপন সন্তান ইডিপাসকে হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছিলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। দৈবনির্দেশে ইডিপাস ফিরে এসেছে জোকাস্টার স্বামী হিসেবে। তিন সন্তান জন্মের পর এ অভিশপ্ত মাকে আমরা দেখি গলায় দড়ি দিয়ে উদ্ধার পেতে। সে বিষণ্ন করুণ মাতৃ-গল্পের আরেকটা দার্শনিক প্রতিবাদ আমরা পাই সফোক্লিসেরই আরেক নাটক ‘ দি ইলেক্ট্রা’য়। এ নাটকে ক্লাইটেমেনেস্ত্রা তার প্রথম স্বামী আগামেমননের হত্যাকে যৌক্তিক মনে করে এ ভাবে যে, স্বামী আগামেমনন ট্রয়ের যুদ্ধে যাবার সময় তার একটি কন্যা সন্তানকে দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেয়। সে সময় সে এ সন্তানের জননী মায়ের কোনো সম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে নি। ক্লাইটেমেনেস্ত্রা এ প্রশ্ন তোলে যে, আমি এ নারী শিশুটিকে দশমাস পেটে ধরেছি বলি দেওয়া হলে আমার মতামত অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা । অথচ আমাকে জিজ্ঞেস করাই হয় নি। তাই এটা আগামেমননের অন্যায় হয়েছে। সে অন্যায়ের আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।  এ যুক্তিতে এসকাইলাসের মতোই মাতৃ-অধিকারের প্রশ্নটা এসেছে যা সামাজিক একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত।  নারীর মাতৃ-অধিকার যুথবদ্ধ চিন্তার প্রকাশ হিসেবে এখানে প্রতিভাত হয়। 

তিন.

ডিএইচ লরেন্সের ‘সনস এন্ড লাভার্স’ উপন্যাসে ছেলে পল আর মা গাট্রুডের জটিল অব্যাখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কে আমরা মায়ের আরেকটা ভাবমূর্তি পেয়ে যাই। আশৈশব পল মাতৃ-অনুরক্ত। মা-ও রোগা, পটকা পলের প্রতি অধিক দুর্বল। পলের খনি শ্রমিক  বাবা মদ্যপ ও স্ত্রী-নির্যাতনকারী। এতে শিশু পলের মায়ের প্রতি তৈরি হয় অধিক নির্ভরতা আর পিতার প্রতি বিদ্বেষ। এই মাতৃ-নির্ভরতার ফলে পল বড় হয়ে স্বাভাবিক নর-নারী সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে মানসিকভাবে। মিরিয়ামের সঙ্গে তার সম্পর্কটি একটি জটিল ধাঁধা আর দ্বিধার প্রকাশ হয়ে ওঠে যেন। মানসিকভাবে সে মিরিয়ামকে গ্রহণ করতে পারে না। তার সামনে মাতৃ-মূর্তি একটা বাধার প্রাচীর হয়ে ওঠে। পল মাতৃকেন্দ্রিকতার এ দায় থেকে মুক্তি পেতে অসুস্থ মাকে ওষুধের অতিরিক্ত ডোজ সেবন করে হত্যা করে। গার্ট্রুড বার বার পলের প্রেম সম্পর্কে যে সব প্রতিক্রিয়া দেখায় তাতে একে যৌন-ঈর্ষাই বলা যায়। আরেকটি  ছোট উপন্যাসের কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়। গ্রেজিয়া দেলেদ্দা ‘ লা-মাদ্রে’। এ উপন্যাসেও ছেলে-সন্তান ও মায়ের সম্পর্কে দ্বন্দ্বের যে আভাস মেলে তাতে মা সন্তানের প্রেম-সম্পর্কে একটা বাধা মাত্র। গ্রেজিয়া দেলেদ্দা নারী ঔপন্যাসিক। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির আলাদা মূল্য আছে। সেখানে ছেলে যে দিকে যেতে চায় মা সে দিকে চায় না। মা চায় ছেলে যাজক হয়ে উঠুক। আর ছেলে চায় সংসারী হতে। পাপ-পুণ্যের দ্বন্দ্বে ছেলে মাকে ছেড়ে যায় সংসারী হতে। এখানেও গার্ট্রুডের মতো এ মায়েরও একটা ভূমিকা আমরা দেখতে পাই। 

চার.

সফোক্লিসের নাটকে যে যুক্তি দেখানো হচ্ছে ক্লাইটেমেনেস্ত্রার পক্ষে, বুদ্ধদেব বসুর কলকাতার ইলেক্ট্রায় সে যুক্তি আর নেই। মনোরমা স্বামী হত্যার জন্যে দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে বড় করে দেখছে।  স্বামী যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চলে যাচ্ছে, তখন সে অসুস্থ। স্বামীকে মনোরমা বলেছিলো, তার অসুস্থতার সময় না যেতে। তার পাশে থাকতে। স্বামীর সামান্য স্পর্শের জন্যে সে কাতর হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু স্বামী যুদ্ধে গেছে স্ত্রীকে উপেক্ষা করে। সে সময় মনোরমা চিকিৎসক অজেনের ভালোবাসা, যত্ন আর নির্ভরতা পেয়েছে। সে স্বামীকে ভুলে গেছে। কিন্তু মনোরমা মা। তার ব্যক্তিসত্তার যে দিকটাতে নারীসুলভ আকাঙ্ক্ষা বড় হয়ে গেছে সে দিকটা তারই সন্তানকে করেছে প্রতিশোধ পরায়ণ। নারীর ব্যক্তিসত্তা বড় না মাতৃসত্তা বড় — সে প্রশ্নে মনোরমা ব্যক্তিতার দিকে ঝুঁকেছে। এর ফল তার মাতৃসত্তার মৃত্যু, অন্যতর অর্থে শারীরিক সত্তারও মৃত্যু ঘটেছে নাটকে। বুদ্ধদেব বসুর আরেকজন মা আমরা পাই ‘প্রথম পার্থে’। কুন্তি। সন্তানকে সে ত্যাগ করেছিলো লোক লজ্জার ভয়ে। সে সন্তান যখন অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়ে তার সামনে ফিরে এসেছে তখন তার মাতৃ-আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে। পুত্র কর্ণ তখন বলছে: “তুমি লজ্জা পেলে না,/ আজ আমার সামনে দাঁড়াতে, আমাকে পুত্র বলে ডাকতে?” কর্ণের ক্ষোভ, অভিমানের বিরুদ্ধে মা কুন্তি শেষ পর্যন্ত বলে, “কিন্তু আমি তোমার অনুতপ্তা মাতা / শুধু রাজ্ঞী নই, শুধু নেত্রী নই, এক নারী  / আমার সান্ত্বনার জন্যে তুমি কি ফিরতে পারবে না?” কর্ণ ফেরে না। যে মায়ের ছোটবেলার স্নেহ পায় নি, তার কাছে মাতৃমূল্যই বা কী?

পাঁচ.

বাংলা উপন্যাসে জননী নামে অন্তত দুটি গ্রন্থ মাতৃত্বকে ধরেছে দুধরনের বৈশিষ্ট্যে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জননী উপন্যসের মা শ্যামা। বিধানের মা শ্যামা, ছিটগ্রস্ত শীতলের স্ত্রীও বটে। তবুও শ্যামা যে কোনো প্রকারে বলা যায় বাংলার মায়েদের প্রত্নপ্রতিমা।  আমাদের বাংলার আটপৌরে অমল-ধবল মাতৃরূপ শ্যামা। শত কষ্টে বেদনায় অকলংকিত মানিকের শ্যামা। তাঁর মাতৃত্বের প্রকাশ ভালোবাসায় যেমন কর্তৃত্বেও তেমন। উপন্যাসের শেষ দিকের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। বিধানের মা শ্যামা বিধানের জন্য মেয়ে দেখে এসেছে। কিন্তু বিধানের সে মেয়ে পছন্দ নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় শ্যামার মনোভাব লেখক প্রকাশ করছেন এভাবে: “লজ্জায় দুঃখে ছেলের মুখের দিকে শ্যামা চাহিতে পারে না। রূপ ও সুষমাই যথেষ্ট নয়, ছেলে তার যৌবন চায়। দেহ অপরিপুষ্ট হইলে ছবির মত সুন্দরী মেয়েও ওর পছন্দ হইবে না। ছি, এ কি রুচি বিধানের?” শ্যামা বাংলার সাধারণ মায়ের প্রত্নপ্রতিমা আগেই বলেছি, ও-তো আর কাহলিল জিবরানের ‘তোমার সন্তান তোমার নয়, তারা জীবনের প্রয়োজনে জীবনের পুত্র ও কন্যা সন্তান’— এ কবিতার ধারণাটা পায়নি। তাই বউটাও হতে হবে তার মতো। অথচ বিয়ে করবে বিধান। শেষতক বিধান অবশ্য নিজের পছন্দে বিয়ে করে। এবার মা শ্যামা হয়ে ওঠে শাশুড়ি। পুত্রবধূর সঙ্গে তার সম্পর্কটা আমরা বুঝতে চেষ্টা করি। তারপর আরেকটা পরিচয়ে তাকে যুঝতে হয়, তার কোলে যখন বিধানের সন্তান আবার বিধান হয়ে ফিরে আসে। 

শওকত ওসমানের ‘জননী’র দরিয়া বিবি মোনাদিরের মা। শ্যামার মতোই  সেও আরও অনেক সন্তানের মা। তার স্বামী ছিটগ্রস্ত নয় কিন্তু অকাল বৈধব্যে দরিয়া সহায় সম্বলহীন। ভারতবর্ষের ঔপনিবেশিক বাস্তবতায় দরিয়ার স্বামী আজহার খাঁ মৃত্যুর আগে পরিবারের জন্য কিছু রেখে যেতে পারে নি। আর দরিয়ার দারিদ্র্যের সুযোগ গ্রহণ করে এক ইয়াকুব। চরম অর্থাভাবে দরিয়া এক সময়  ইয়াকুবকে প্রতিরোধ করতে পারে না। অভিমানে  মোনাদির মাকে ফেলে চলে যায়। আর বিধবা মা দরিয়া  আরেকটি সন্তানের জন্ম দিয়েই জোকাস্টার মতোই আত্মহত্যা করে। আমাদের গ্রামবাংলার দারিদ্র্যক্লিষ্ট মায়ের এক নির্মম রূপ দরিয়া। 

বাংলা কবিতায় বাঙালি মাতৃরূপের আর্কিটাইপটা আমরা পেয়ে যাই শামসুর রাহমানের ‘কখনো আমার মাকে ’ কবিতায়। শামসুর রাহমান লিখছেন: “কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনি নি।/ সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে/ আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন  কি না আজ মনেই পড়ে না।/ সংসারে এসেও মা আমার সারাক্ষণ / ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর/ জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল/ কোনোদিন। মাছকোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে / অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন/ ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন/ সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়/ ছেঁড়া শার্টে রিপু কর্মে মেতে / আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে/ অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না/ এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারি নি/ যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে / রেখেছেন বন্ধ করে আজীবন, এখন তাদের/ গ্রন্থিল শরীর থেকে কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু/ ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে!” বাংলার মায়েরা এমনি। তাদের কোনো স্বর নেই। সে জন্যেই রফিক আজাদ যখন ‘মায়ের দুচোখ চাই ’ কবিতায় বলেন : “মায়ের আদরে-যত্নে আমি এ অরণ্য সামলাবো/ অযুত নিযুত কণ্ঠে ‘মা’ ডাক শুনবো প্রাণ ভরে”— তখন এ আকাঙ্ক্ষা কেবল রফিক আজাদের নয় আমাদের সকলের হয়ে ওঠে।


মো. মেহেদী হাসান উপাধ্যক্ষ এবং প্রাবন্ধিক, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ

menu
menu